রবীন্দ্রনাথ কয়টি দেশের জাতীয় সঙ্গীত লিখেছিলেন? দুইটি না তিনটি? আসুন প্রকৃত সত্য জেনে নেই
১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণকালে মস্কোয় পায়োনিয়ার্স কমিউনের অনাথ বালক-বালিকারা রবীন্দ্রনাথকে একটি গান গাইতে অনুরোধ করলে, তিনি তাদের জনগণমন গেয়ে শোনান।
আমার সোনার বাংলা গানটি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। এ গানের রচয়িতা ও সুরকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এই গানটি রচিত হয়েছিল। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে এ গানটির প্রথম দশ লাইন সদ্যগঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয়সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচিত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে কেবল প্রথম চার লাইন বাদন করা হয়।১৯০৫ সালে ব্রিটিশ সরকার যখন বাংলা অঞ্চলকে পশ্চিম বঙ্গ ও পূর্ব বঙ্গ (এখনকার বাংলাদেশ) এই দুই ভাগে ভাগ করে দেয় তখন বাঙালিরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেই আন্দোলনের পক্ষে প্রতিদিন লেখা হত নতুন নতুন গান কবিতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও সেই সময় বেশ কিছু গান রচনা করেছেন। মনের ভেতর গেঁথে থাকা বাউল গগন হরকারের ‘আমি কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যে রে-‘ সেই গানটির সুরের সাথে মিল রেখে রবীন্দ্রনাথ রচনা করলেন বিখ্যাত গান ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’।বাংলাদেশ স্বাধীন হবার বেশ কয়েক বছর আগে (সম্ভবত ৬৬ ছয় দফার সময় ই) বঙ্গবন্ধু একমাত্র এই গানটিকেই তার দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে নির্বাচন করেছিলেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ গঠিত হয় স্বাধীন বাংলার কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ। পরে ৩ মার্চ তারিখে ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভা শেষে ঘোষিত ইশতেহারে এই গানকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে এই গান প্রথম জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হয়।
আর একটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত এর ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের নাম জড়িয়ে আছে এবং বেশ ভালো ভাবেই জড়িয়ে আছে।দেশটির নাম শ্রীলঙ্কা।সেই জন্য একটু পেছনে ফিরে যেতে হয়।১৯৩৮ সাল সিংহল এর এক গীতিকার সুরকার পড়তে আসেন গুরুদেবের (রবীন্দ্রনাথ) শান্তিনিকেতনে।নাম আনন্দ সামারাকুন।সেই সময় ই তিনি গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে তার দেশ নিয়ে একটি দেশাত্মবোধক গান লিখে দিতে অনুরোধ করেন।রবীন্দ্রনাথ তার প্রিয় ছাত্রের কথা রাখলেন।তিনি লিখলেন ব্রিটিশ শাসিত পরাধীন শ্রীলঙ্কা নিয়ে একটি দেশাত্মবোধক গান ।যার প্রথম লাইন “শ্রীলঙ্কা মাতা,নম নম নম মাতা” যা বর্তমানে শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত।
গানটি তিনি বাংলা ভাষায় লিখেছিলেন।তিনি এটার সুর ও করে দেন।আনন্দ সামারাকুন ১৯৪০ সালে তার নিজ দেশ সিংহল তথা শ্রীলঙ্কায় ফিরে যান এবং এবং গানটি সিংহলি ভাষায় অনুবাদ করেন এবং গুরুদেবের দেয়া সুরেই এটি রেকর্ড করেন।
এই সম্পর্কে দ্যা হিন্দুর একটা আর্টিকেলঃ Click This Link
এই গেল একটি ঐতিহাসিক তথ্য, আর একটি তথ্য এই রকম
সামারাকুন মূল গানটি প্রথমে নিজেই লিখেছিলেন, লিখে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের কাছে যান।রবীন্দ্রনাথ গানটি পড়ে গানটিতে কিছু সংশোধনী এনে দেন ও গানটির সুর কিভাবে হবে তা সামারাকুন কে বলে দেন।এরপর সামারাকুন নিজেই গুরুদেবের বলে দেয়া সুরে গানটিতে নিজেই সুরারোপ করেন।
এই সম্পর্কে টাইম্স অব ইন্ডিয়ার আর্টিকেলঃ Click This Link
এই তথ্যটা বলা হয়েছে শান্তিনিকেতনের পক্ষ থেকে।তবে উইকিপিডিয়ায় বলা আছে মূল গানটি লিখেছেন ও সুর করেছেন মহান বাঙ্গালি কবি রবীন্দ্রনাথ।সামারাকুন এটাকে স্রেফ সিংহলি ভাষায় অনুবাদ করেন কিছুটা পরিবর্তন এনে ও সুরেও কিছুটা পরিবর্তন আনেন।
উইকিপিডিয়াঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Sri_Lanka_Matha
“শ্রীলঙ্কা মাতা,নম নম নম মাতা” এই গানটি শ্রীলঙ্কার প্রথম স্বাধীনতা দিবসে ১৯৫২ সালে গাওয়া হয়।গানটি ১৯৫৩ সালে শ্রীলঙ্কান গেজেটে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহন করা হয়।গানটি এর পর তামিল সহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়।আর এর রচয়িতা হিসাবে আনন্দ সামারাকুন কেই ধরা হয়।
No comments